মুজিববর্ষ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে টান দিলেই ভেঙে পড়ে বারান্দার পিলার। পলেস্তারা খসে পড়ছে।
অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও রামদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একে অপরকে দুষছেন।
উপজেলার রামদী ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের জগৎচর এলাকায় ৮ শতাংশ খাস জমিতে ভূমিহীনদের জন্য চারটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
তবে নির্মাণের প্রতিটি ধাপে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি।
রামদী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলালউদ্দীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু, কাঠ, টিন ব্যবহার করা হচ্ছে। বালুর অনুপাতে সিমেন্ট কম দেয়ার ফলে দেয়াল থেকে আস্তর ধসে পড়ছে এবং পিলার ভেঙে যাচ্ছে। পিলারে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি। তা ছাড়া সৌন্দর্যের জন্য যে রং ব্যবহার করা হচ্ছে তাও নিম্নমানের। এই ঘরগুলোতে যারা উঠবে, তাদের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তিন দিন আগে নতুন মিস্ত্রি আনা হয়েছে। ঘরের প্লাস্টার ও বারান্দার পিলারগুলো ভেঙে আবার করা হচ্ছে। তবে ঘর তৈরির শেষ পর্যায়ে উনাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঘর যা হবার তো হয়েই গেছে। তবে প্লাস্টার আর বারান্দার কাজ ভালোই হচ্ছে।
ইউএনও রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বারান্দার দেয়াল এবং পিলারে প্লাস্টার করার পর নিয়মিত পানি না দেয়ায় এমনটা হয়েছে। আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে মিস্ত্রি পরিবর্তন করে সিমেন্ট-বালুর অনুপাত ঠিক রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করে দেয়ালের প্লাস্টার এবং পিলারগুলো ভেঙে আবারও নতুন নির্মাণ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারও কোনো গাফিলতি ছিল না। প্লাস্টার করে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না দেয়ায় পলেস্তারা খসে খসে পড়ছিল।’
তিনি আরও বলেন, যে চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, ঘর নির্মাণের ইটগুলোও তার মাধ্যমেই নেয়া হয়েছিল। ওনার এলাকায় কাজ হচ্ছে আর চেয়ারম্যান হিসেবে উনি নিজেও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য। আর দেখভাল করার দায়িত্ব ওনারও ছিল। উনি অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতেই আবারও ওনাকে সবকিছু মনিটরিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আলালউদ্দীন বলেন, ‘আমার তো ইটের ভাটা নেই। আমি ইট দিব কোথায় থেকে?’
তিনি বলেন, ‘এই চারটা ঘরের আগে আরও দুইটা ঘর হইছিল, তখন নিম্নমানের ইট দেয়া হলে ইটগুলো ফেরত নেয়া হয়। পরে এই ঘরগুলো নির্মাণ করার সময় ইউএনও আমাকে বলেন আমার কোনো ইটভাটাতে বন্ধু-বান্ধব আছে কি না? তখন আমি একজনকে ওনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ইউএনও নিজেই তার সাথে কথা বলে ইট কিনেছেন।’
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সভাপতি ইউএনও রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন এই প্রকল্পের সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার।